সেদিন রাস্তায় বেরিয়েই বিপত্তি। একটা অটো হুইলার পিছন থেকে এসে মারল এক ধাক্কা। মুখ থুবড়ে পড়লাম সামনে। মাথায় আর বুকেই চোটটা বেশি লেগেছিল। অবস্থা গুরুতর। তায় আবার বুড়ো মানুষ। যমে মানুষে দুদিন চলল জোর টানাটানি। অবশেষে আজ সকাল সাতটা তেত্রিশ মিনিট বাইশ সেকেণ্ডে আমি মারা গেলাম। একটা সাধ ছিল, জানি না সেটা আর পূর্ণ হবে কিনা।
কি ভাবছেন? ধাপ্পা দিচ্ছি? মারা যাবার পরেও দিব্যি লিখে যাচ্ছি কি করে? আরে ওখানেই তো ফাণ্ডাটা। আমি এখন যে ইমার্জেন্সী সার্ভিসে চলছি। আসলে ব্যাপারটা কিছুই নয়। মরে গেলে, মানে এই অ্যাক্সিডেন্টের মত কোন আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা গেলে মানুষের শরীরে তখনও পর্যন্ত কিছু সঞ্চিত শক্তি থেকে যায়। কিন্তু আগেকার দিনে, মানে আপনাদের সময়ে কি হত? ঐ মরাটাকে পুড়িয়ে ফেলা হত কিংবা কবর দেওয়া হত কিংবা কফিন বন্দী করা হত। তাতে ঐ যে সঞ্চিত শক্তিটুকু যা মৃতের শরীরে তখনোও অবশিষ্ট রয়ে যেত তা নষ্ট হত। তাই আমরা এখন করি কি – এই শক্তিটাকেও কাজে লাগাবার জন্যে মানবশরীরে একটা ওয়ার্কআউট ডিভাইস ঢুকিয়ে দিই। জন্মের সময়েই এটা করা হয়। এই ডিভাইসটার কাজই হল দেহের শেষ শক্তিটুকুকেও সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করে আমাদের অর্গ্যানগুলোকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ মরাটাকে যতক্ষণ ইউটিলাইস করা যায় – এই আর কি। তবে এতে সব থেকে বেশি সুবিধা হয় পুলিশের। খুনের কিনারা করতে।
আর আমার সুবিধা হল, নিজের শেষ ইচ্ছেটাকে পূরণ করার একটা সুযোগ আমি পাব। না তার মানে এই নয় যে জীবনের একশো তিরিশটা বছর কাটানোর পরও আমার আরও দশ বিশ বছর বাঁচার ইচ্ছা ছিল। বিশেষ করে, বাঁচাটা এখন আমার কাছে একটা অভ্যাস বই তো নয়। তবে মরার ইচ্ছেও যে ছিল তা নয়। কিন্তু কি আর করা যাবে?
তবে আর দেরী নয়, এবার আমার ইচ্ছেটাকে মেটাতেই হবে। এতদিন আলস্যে কাটিয়েছি। আজ যাব, কাল যাব করে আর যাওয়াই হচ্ছিল না। না হলে কবেই তো ভেবেছিলাম ঘুরে আসব মানসীপুরম। কে আর জানবে, অটোহুইলারটা এসে সব পণ্ড করে দেবে?
আসলে আমার কপালটাই খারাপ। না হলে অটোহুইলারও অ্যাক্সিডেন্ট করে? আরে এতে যে সবই অটোমেটেড। সামনে কিছু এলেই এ গাড়ি আপনা থেকেই দাঁড়িয়ে যায়। সমস্ত দিক হিসেব নিকেশ করে বুঝেশুনে এ চলতে জানে। এতটুকু গোল হবার জো নেই। তবুও হল তো। আর হল বলেই অ্যাক্সিডেন্টও হল। মানুষের ভুল হয়, যন্ত্রেরও কি হয় না?
তবে যাই হোক, তাই হোক। এখন আমার শেষ শক্তিটুকুই সম্বল। কাজেই আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে পড়ব বলে ঠিক করে ফেললাম। তারপর ফিরে এসে ক্ষমতা থাকলে সবাইকে আমার মৃত্যুর ব্যাপারটা জানাব। হাসপাতালটা আমাকে ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছে দিল। আসলে হাসপাতালগুলোও এখন এক একটা গাড়ি। যখনই এসব দুর্ঘটনা ঘটে, ডাক্তার-নার্স, লটবহর সমেত এ স্পটে হাজির হয়ে যায় নিমেষে। ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দেখি নোটিফিকেশন বক্সে বেশ কতকগুলো মেল এসেছে। অ্যাক্সিডেন্টে ফোনটার বারোটা বেজেছে, তাই মেলগুলো সব বাড়িতে আসছে। দেওয়ালে ঝুলছে বিশাল বড় ডিস্প্লে বোর্ড। টাচ স্ক্রিন। সমস্ত দরকারী মেল, আমার কাজকর্মের হিসেব নিকেশ, কন্ট্র্যাক্ট ফর্ম, রিমাইণ্ডার – কি নেই সেখানে? যাই হোক, দু-তিনটে মেল ডিলিট করলাম। শেষেরটা পাঠিয়েছে আমার নাতনি। তার মেল পড়ে আমার তো হয়ে গেল। সে লিখেছে আজ দুপুর তিনটে বেজে চব্বিশ মিনিট চার সেকেণ্ডে স্যাণ্ডার্স আমার এখানে আসবে। যাঃ চলে!! তার মানে আমার মানসীপুরম যাওয়ার তো একেবারে পিণ্ডি চটকে গেল! যদিও স্যাণ্ডার্সকে আমিই আসতে বলেছিলাম। তবে তাও তো বছরখানেক হয়ে গেল। এতদিনে হল ওনার আসার সময়? আসলে আমি বুড়ো মানুষ – তাই আমার কথার দাম সবার পরে। ওদের এখন ব্যস্ততা! সারাদিনই তো ও প্রোজেক্টের কাজে ব্যস্ত। তাই নিজের নাতনীর একমাত্র ছেলে হলেও আমার সাথে ওর মোলাকাত তিন-চার বছরে দু-একবারের বেশি হয় না।
তবু স্যাণ্ডার্স আসছে শুনে আমার ভালও লাগল। কতদিন দেখিনি ওকে। না জানি ও এখন কত পাল্টে গেছে। ওকে দেখব বলেই আমি ডেকেছিলাম। কোন দরকারী কারণে নয়। তাই ভয়ও হয়, ও কি বুঝবে আমার এই আবেগ? ওকে শুধু দু-দণ্ড কাছে পেতেই যে ডেকেছি – এইসব বুড়োটে কথাবার্তা শুনে ও হয়ত আমার ওপর চটেই যাবে। তার চেয়ে কাজ কি, ঠিক করলাম আমার সাথেই ওকে নিয়ে যাব মানসীপুরম। আমারও যাওয়া হবে, ওরও একটু ঘোরা হবে। সেই ছোটবেলায় যেতাম সেখানে। তারপর কতদিন যাই নি। আজ আবার যাব। ভাবতেই মনটা বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল।
ঠিক এমনই সময়ে বেজে উঠল কলিং বেল। ঐ, স্যাণ্ডার্স এলো বোধহয়। যদিও আমি থাকি দুশো বাইশ তলায়। তবে এখানকার এলিভেটর দুই সেকেণ্ড সাড়ে চার বাই-সেকেণ্ডে আমার ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়াল আর অমনি বেজে উঠল বেল। আমি নোটিফিকেশন বক্স চেক করতে করতেই বাঁ হাতে রিমোটে দরজা খুলে দিলাম। ঘরে এসে ঢুকল সাত বছরের ফুটফুটে স্যান্ডার্স। মাথার চুলগুলো ছোট করে ছাঁটা। আমি মেশিন অফ করে ওর দিকে তাকাতেই ও মৃদু হেসে উঠল।
আহা! কত বড় হয়ে গেছে ও। আগে আরও ছোট ছিল। মায়ের হাত ধরে টুকটুক করে এসেছিল। সে প্রায় দু-তিন বছর আগের কথা। আজ এসেছে একা। আমার ইচ্ছে হল ওকে বুকে জড়িয়ে ধরি, জড়িয়ে ধরে আদর করি, আদর করে চুমু খাই ওর মিষ্টি গালদুটোতে। কতদিন দেখিনি তোকে। আয় সোনা, কাছে আয়...
নাঃ, এইসব এখন না ভাবাই ভাল। ওকে শুধুশুধু কাছে ডাকতে গেলে খামোকা রেগে যাবে। বলা যায় না, আজকালকার ছেলে তো। এসব বোকা বোকা ন্যাকা ন্যাকা ভাবসাব একদম সহ্য করতে পারে না।
স্যাণ্ডার্স দেখলাম এইটুকুতেই মেজাজ নিল। ঝামটা দিয়ে বলে উঠল, ‘কি করতে ডেকেছো বলতে পারো? আমার হাতে টাইম কিন্তু জাস্ট ফরটি মিনিটস। আর অলরেডি থারটি সেকেণ্ডস ওভার। সো ডোন্ট ওয়েস্ট মাই টাইম’।
আমি থমকে গিয়ে তড়িঘড়ি বলি, ‘চল একটা জায়গায় যাব’।
- কোথায়?
- মানসীপুরম।
- তাহলে তোমার তো আজ কাজ হবে না। লস খাবে তো। ফ্রিল্যান্সের জবে তো টোয়েন্টি ফোর আওয়ার্স ডিউটি।
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। সাত বছরের ছেলেরও ফ্রিল্যান্সিং সম্বন্ধে কি দারুণ আইডিয়া! আমার এই বুড়ো বয়সে ফ্রিল্যান্সিং-এর কাজ ছাড়া কোন গতি নেই। ল্যাপটপের ডেটাবেস দেখে সার্চ মারো, ক্লায়েন্ট খোঁজো আর তাদের চাহিদামাফিক ডিজাইনিং কর। প্রতি অ্যাসাইনমেন্ট পিছু একটা থোক টাকা। এখন আর বেশি ক্লায়েন্ট খোঁজার ধৈর্য্য থাকে না। কাজও তাই গেছে অনেক কমে। মাস গেলে ষাট-পঁয়ষট্টি লাখের বেশি আসে না। তবে একার সংসারে এর থেকে বেশি আর কি-ই বা চাই।
তবে স্যাণ্ডার্সকে আমি এখনই কিছু বললাম না। ওকে জানালাম না যে আমি জগতের সমস্ত লাভ-লোকসানেরই ঊর্ধ্বে উঠে গেছি। তাই এসব নিয়ে এখন আর মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। যতক্ষণ জীবন ততক্ষণই হিসেব। এখন শেষ ইচ্ছেটুকু মিটলেই হল। মুখে শুধু জানালাম, ‘একদিন একটু লস হলে ক্ষতি নেই। তার চেয়ে যেখানে যাচ্ছি সেখানে গেলে লাভ হবে বেশি’।
স্যাণ্ডার্সের প্রশ্ন, ‘সে কি? কেন?’
- চল না। গেলেই বুঝবি। তবে যেতে হবে কিন্তু হেঁটে।
হাঁটার কথা শুনেই স্যাণ্ডার্স নাক সিঁটকালো। তবে মুখে বলতেও পারল না কিছু। কারণ ডাক্তার ওকে দৈনিক হাঁটতে বলেছে। তবু বছরে সে যে কতটুকু হাঁটে সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সারাদিনই তো খালি অটোহুইলার। এ গাড়িগুলো আপনাদের সময়ের টোটো রিকশার মত। তবে এর চারিদিক পুরু কাঁচে মোড়া। ফলে জোর অ্যাক্সিডেন্ট হলেও এর বিশেষ ক্ষতি হয় না। কিন্তু এতে চড়ার ফলে আজকালকার বাচ্চাগুলো সব মোটা হয়ে যাচ্ছে। আর দেহে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। স্যাণ্ডার্সও তো হার্টের পেশেন্ট। তাই ডাক্তার ওকে প্রতিদিন পরিশ্রম করে দুশো দশমিক শূন্য দুই কিলোক্যালরি শক্তি বেশি খরচ করতে বলেছে। স্যাণ্ডার্সের হাতে তাই একটা ক্যালরিমিটার বাঁধা থাকে। হাঁটতে হাঁটতে যেই অতিরিক্ত শক্তি খরচ হয়ে যায়, অমনি ক্যালরিমিটারে অ্যালার্ম বেজে ওঠে। ব্যস, হাঁটা শেষ।
তবু আমি আজ হাঁটব। নিজের সবটুকু শক্তি উজাড় করে হেঁটে চলব, চলতেই থাকব।
বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। হাঁটতে হাঁটতে স্যাণ্ডার্স জিগ্যেস করে, ‘আচ্ছা, মানসীপুরম জায়গাটা কি চিলড্রেন্স পার্কের থেকেও ভাল?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ’। চিলড্রেন্স পার্ক। সেখানে আছে ফাইবারের দুটো বক আর প্লাস্টিকের বট অশ্বত্থ। আজকালকার ছেলেমেয়েরা অবশ্য এইগুলো দেখেই গাছপালা, পশুপাখি চেনে।
স্যাণ্ডার্স বলে, ‘তার মানে বৃস্টল স্কোয়ারের মত?’
আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘উঁহু। এটা তার চেয়েও ভাল’। লক্ষ্য করলাম, স্যাণ্ডার্সের চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বৃস্টল স্কোয়্যারের পার্কটা আর তার ডিসনিল্যাণ্ডটা যেখানে টেনথ ডাইমেনশানের ভিডিও চলে – এ দুটোই স্যাণ্ডার্সের খুব পছন্দ। তার চেয়েও ভাল জায়গা মানসীপুরম?
পরক্ষণেই মনে হল, কথাটা ভুল বলা হয়ে গেল না তো? আজকালকার ছেলে ও, ওর কি ভাল লাগবে মানসীপুরমের মত জায়গা? যদি না লাগে, তখন ও আবার রেগে যাবে। ঝামেলা করবে আমার সাথে। গালিগালাজও করতে পারে। মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছেটুকু মেটাতে এসেও শান্তি পাব না।
যাক গে, যা হবার তা হবে। যেতে তো হবেই।
* * *
দেখতে দেখতে অনেক দূর পেরিয়ে এলাম আমরা। পা ব্যথা ব্যথা করতে লাগল। দেহের শক্তি ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ। যেতে পারব তো পুরোটা পথ?
কতদূর চলে এলাম কে জানে? যে রাস্তা দিয়ে আমরা চলছিলাম সেটা সাত-আট ফুট মতন চওড়া। আর যত এগোচ্ছিলাম ততই চারিপাশের শহুরে ভাবটা কমে আসছিল। একটা দুটো গাছ। আজকের এই কৃত্রিম ফোটোসিন্থেটিক ডিভাইস নয়। প্রকৃতির কোলে তার আপন খেয়ালে তৈরী গাছ। হয়ত পৃথিবীর এই অংশটুকুতে মানুষের নজর পড়েনি এখনও। তাই পরিত্যক্ত জায়গাটা এভাবে ‘নষ্ট’ হয়েছে। বসুধা গর্ভবতী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, জন্মে উঠেছে কাঁচা সবুজ। এ সবুজ আমি বিশেষ দেখিনি। কৃত্রিম সবুজ দেখে দেখে অভ্যস্ত মন এই পরিবেশে এসে মোহে আবিষ্ট হয়ে গেল। মনে হল, আমি যেন আর নিজে চলছি না। পা দুটোই যেন নিজে থেকে আমাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যথায় টনটন করছে পা। তবু থামতেও আমি পারছি না।
হঠাৎ খেয়াল হল, স্যাণ্ডার্সও হাঁটছে আমার সাথে। ক্যালোরিমিটারের অ্যালার্ম বেজে বেজে থেমে গেছে। সাড়ে তিনশো কিলোক্যালোরি খরচ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। ওর কপাল থেকে, গলা থেকে বিন্দু বিন্দু ঘাম মুক্তোর মত চকচক করছে। তবু ওর যেন এতটুকু ক্লান্তি নেই। ও যেন নতুন প্রাণস্পন্দনে হেঁটে চলেছে। কিন্তু কেন? কিসের টানে হাঁটছি আমরা? এই পরিত্যক্ত অনুন্নত গাঁইয়া জায়গায় এসেও কেন আরও যেতে ইচ্ছে করে আমাদের? নিজের মধ্যে থেকে কোন উত্তর পেলাম না। টের পেলাম একমুঠো বাতাস এসে আমার বুকটাকে ভরিয়ে তুলল। আহ্! জীবনে কতদিন এভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারিনি।
হঠাৎ চোখে এল রাস্তাটা এবার একটা কাঁচা মাটির পথে এসে শেষ হয়ে গেছে। আর সেখান থেকে শুরু হয়েছে বহুদূরব্যাপী দিগন্তবিস্তৃত মাঠ। সেই মাঠের ওধারে একটা পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে এসেছে একটা নদী।
স্যাণ্ডার্স হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। আমার মুখের দিকে একবার তাকাল ও। আমি ভাবলাম, ও বোধহয় এখনই ফিরে যেতে চাইবে। তবে ওর চোখদুটো বেশ উজ্জ্বল লাগছে। প্রাণোচ্ছ্বাসে পূর্ণ ওর চোখের তারা। হঠাৎ আমার হাত ছেড়ে ও দৌড় দিল ঐ মাঠের ভেতর। আমিও চেষ্টা করলাম ওর পিছন পিছন ছুটে চলি। কিন্তু নাঃ, আমার আর ক্ষমতা নেই। ইমার্জেন্সী পাওয়ার প্রায় শেষ। আমি বসে পড়লাম কাঁচা রাস্তার ওপরেই। চীৎকার করে একবার ওকে ডাকলাম, ‘স্যাণ্ডি, যাস না বাবা। ফিরে আয়। ফিরে আয়। এক্ষুণি তোকে আমি অটো-হুইলারে তুলে দিচ্ছি’। কিন্তু কে কার কথা শোনে? স্যাণ্ডার্স যেন তার মায়ের কোলে ছুটে যাচ্ছে। এমনভাবে সে ছুটছে যেন ওর নাড়ীর টান ও প্রকৃতির এই বিশালতার মধ্যে খুঁজে পেয়েছে। আমি আর ওকে ডাকলাম না। যাক, ও ছুটে যাক। যেখানে খুশী, যতদূর খুশী।
পুনশ্চ – গল্পটা এতদূর লিখে আমাকে থামতেই হল। কারণ আর লেখার আমার ক্ষমতা নেই। কিন্তু আমার এই লেখা কে বুঝবে? নাঃ এখানে আমাদের এই দুনিয়ার কেউ নেই এ লেখা বোঝার। এখানে কারুর সাথে কারুর দেখা করারই সময় নেই। তায় আবার আমার মতন একটা বুড়োর এমন ম্যাড়মেড়ে লেখা। তবে আমি যতদূর জানি আগেকার দিনে এসব অনুভূতিগুলো বোঝবার মত লোক ছিল। বিশেষত মনে পড়ছে বাংলার কথা। মাটির মানুষের দেশ সেটা। তারা ভালবাসতে জানত।
তাই স্যাণ্ডার্স, তোকে বলি। যদি ফিরে এসে আমার এই লেখাখানা পাস তবে টাইম মেশিনে একে ২০১৬ সাল নাগাদ পাঠিয়ে দিস। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিস। আর হ্যাঁ, লেখাটাকে ওদের ভাষাতেই অনুবাদ করেই পাঠাস। বেশি সময় লাগবে না। অটো-ট্রান্সলেটরে ফেললেই দেখবি সব ঠিকঠাক অনুবাদ হয়ে যাবে। নাঃ, কলম আর চলছে না। চোখেও আর ভাল দেখতে পাচ্ছি না। আর পারছি না...